বিশেষ প্রতিবেদক,চকরিয়াঃ
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় রাতের আধারে জহির আহমদ গং চাষাবাদী প্রায় এক একর পরিমাণে জমির চাষাবাদী ধানের চারা সন্ত্রাসী কায়দায় নষ্ট করে দেয়ার সংবাদ প্রচার ও লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এবার ভুক্তভোগি কৃষক ও ছেলে-মেয়েকে পিটিয়েছে ভূমিদস্যুরা। এমনকি ভুক্তভোগি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাও ভেঙ্গে দিয়েছে তারা। ১৭সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৃথক দুইটি স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে।
ইতিপূর্বে ধানক্ষেত নষ্ট করার বিষয়ে কোনাখালী ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়া গ্রামের জহির আহমেদের মেয়ে ও হাফেজ শাহ আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এদিন বিকেলে লিখিত অভিযোগ করেন।
এতে অভিযুক্ত করা হয় মৃত ওদুল হাকিম আলীর পুত্র বদরুদ্দোজা, মৃত নুর আহাম্মদের ছেলে কাইছার হামিদ প্রকাশ বাটু, মৃত আবুল ফজলের ছেলে আব্দু ছত্তার, মৃত বশির আহমদের ছেলে নুর মোহাম্মদ সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে।
অভিযোগে কোনাখালীর সিকদার পাড়ার জহির আহমেদের বড় মেয়ে ও হাফেজ শাহ আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তার জানান, কোনাখালী মৌজার বি.এস খতিয়ান নং ১২, দাগ নং- ২৫৭৮ এর ৯ একর ৯৪ শতক জমির মালিক হন। তার পিতা জহির আহমদের দীর্ঘ ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় উক্ত জমিতে শান্তিপূর্ণভাবে ধান চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময় থেকে উক্ত জমির মধ্যে প্রায় এক একর জমির প্রতি লুলোপ দৃষ্টি পড়ে চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্রের।জমির পাশ্ববর্তী জনৈক মোক্তার আহমদ ৪টি খতিয়ানের ১৩টি দাগ মিলে ১কানি ৪শতক জমির মালিক হলেও তিনি ভূমিদস্যু চক্রকে এক দাগে ২কানি জমি অবৈধভাবে বিক্রি করে। ফলে ভূমিদস্যুচক্রের সাথে এলাকার শান্তিপূর্ণ ও নিরীহ পরিবারের সাথে জমি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ঘটনার দিন ওই বিষয়কে কেন্দ্র করে অভিযুক্তরা গত বৃহস্পতিবার ভোররাত অনুমানিক ২টার দিকে অস্ত্রশস্ত্র সহকারে ৩০-৪০ জনের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমি রোপিত প্রায় এক একর (আড়াই কানি) পরিমাণে জমির ধানের চারা কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। অধিকাংশ চারা উপড়ে ফেলেছে। পরে পাঁকা গুলি বর্ষণ করে পালিয়া যায়। এছাড়াও চারপাশে চাষযোগ্য চারা ধান মারাত্বক ভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে ধানের জমির চারা রোপন, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরী ও সেচের যাবতীয় খরচসহ অন্তত ১লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ভুক্তভোগি পরিবারের জহির আহমদের পুত্র মিজানুর রহমান জানান, অভিযুক্তরা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পূর্ববড়ভেওলা থেকে কয়েকজন ভাড়াটিয়া অস্ত্রধারী লোকজন এনে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টার দিকে কথিত মানববন্ধনের আয়োজন করে। তিনি বিষয়টি জানতেন না। কিন্তু ওই সময় তিনি একা পরিষদের সামনে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় তাকে দুর থেকে ধর ধর বলে ধাওয়া করে ধরে বেধম মারধর করে। ওই সময় অভিযুক্তরা কথিত এই মানববন্ধন করে ফেসবুকে ভিডিও প্রচার করে। পরে তাদের মানববন্ধনে কথিত হামলা হয়েছে বলে সাজানো অভিযোগ তুলে দু’য়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা ও হাস্যকর সংবাদও প্রচার করেছে। অথচঃ তিনি হামলায় আহত হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেন। অপরদিকে তাকে বড়বোন পারুল আক্তার(৩০) ও পিতা জহির আহমদ (৬৭) বোনের বাসা থেকে দেখতে যাওয়ার পথে জঙ্গলকাটা এলাকায় পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধম মারধরে গুরুতর আহত করেছে। হামলাকালে তার পিতা জহির আহমদের একটি ভেঙ্গে দিয়েছে। বর্তমানে তাদেরকে চকরিয়া সরকারি হাসপাতাল থেকে আশঙ্খাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করেছে। ভুক্তভোগি পরিবারের মিজান মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানান এবং সংশ্লিষ্ট কাউকে বিভ্রান্ত হওয়ার আহবান জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন কোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম ও ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল কালাম। তারা ধানী জমিতে তান্ডব ও হামলার বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক বলে উল্লেখ করেন।
চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।##